Xiaomi 15 Ultra এখন মোবাইল ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম আলোচ্য বিষয়। যেহেতু এটি Xiaomi-এর আপকামিং ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস, তাই সবার মধ্যেই এ ফোনটি নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। ফিচার, পারফরম্যান্স, এবং ক্যামেরার দিক থেকে Xiaomi 15 Ultra আগের সব মডেলকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলুন, ফোনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই এবং এর সম্ভাব্য ভালো-মন্দ দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করি।
এক নজরে Xiaomi 15 Ultra
বৈশিষ্ট্য | বিস্তারিত |
---|---|
ডিসপ্লে | 6.73 ইঞ্চি AMOLED, 120Hz রিফ্রেশ রেট, Dolby Vision, HDR10+ সাপোর্ট |
প্রসেসর | Qualcomm Snapdragon 8 Gen 3, 4nm আর্কিটেকচার |
র্যাম | 12GB / 16GB |
স্টোরেজ | 256GB / 512GB / 1TB, UFS 4.0 |
মেইন ক্যামেরা | 200MP প্রাইমারি + 50MP টেলিফটো (10x জুম) + 50MP আল্ট্রা-ওয়াইড |
সেলফি ক্যামেরা | 32MP, AI বিউটিফিকেশন |
ব্যাটারি | 5000mAh, 120W ফাস্ট চার্জিং, 50W ওয়্যারলেস চার্জিং |
অপারেটিং সিস্টেম | MIUI 15 (Android 14 ভিত্তিক) |
সংযোগ | 5G, Wi-Fi 7, Bluetooth 5.3, NFC |
ডিজাইন | গ্লাস ফ্রন্ট, সেরামিক ব্যাক, অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম |
ওজন | 221 গ্রাম |
মূল্য (সম্ভাব্য) | ১,২০,০০০ টাকা থেকে শুরু |
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
Xiaomi 15 Ultra হাতে নিলেই বোঝা যায় যে এটি একটি প্রিমিয়াম ফোন। এর সেরামিক ব্যাক এবং অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের সমন্বয় ফোনটিকে দুর্দান্ত স্টাইলিশ লুক দিয়েছে। 6.73 ইঞ্চি বড় AMOLED ডিসপ্লেটি অত্যন্ত ব্রাইট এবং রিচ কালার আউটপুট দেয়। HDR10+ এবং Dolby Vision সাপোর্টের কারণে ভিডিও দেখা এবং গেম খেলা আরও উপভোগ্য।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ফোনটি হাতে ধরার সময় প্রিমিয়াম অনুভূতি দেয় এবং এর গ্রিপ খুব ভালো। স্লিম ডিজাইন হওয়া সত্ত্বেও ফোনটি বেশ টেকসই মনে হয়েছে। সেরামিক ব্যাক কিছুটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ধরে রাখে, তবে Gorilla Glass Victus 2 সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত।
পারফরম্যান্স
Xiaomi 15 Ultra তে ব্যবহার করা হয়েছে Qualcomm-এর লেটেস্ট Snapdragon 8 Gen 3 চিপসেট, যা 4nm আর্কিটেকচারে নির্মিত। এই চিপসেটটি বর্তমান বাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসরগুলোর একটি এবং এটি AI প্রসেসিং এবং হাই-এন্ড গেমিংয়ের জন্য অপ্টিমাইজড।
আমার ব্যবহারের সময় ফোনটি খুব স্মুথভাবে কাজ করেছে। অ্যাপ ওপেন করা, মাল্টিটাস্কিং, এবং গেমিং সবকিছুতেই চমৎকার পারফরম্যান্স দিয়েছে। Call of Duty: Mobile এবং Genshin Impact-এর মতো হাই-এন্ড গেমে কোনো ল্যাগ বা ফ্রেম ড্রপ দেখতে পাইনি।
পারফরম্যান্সের প্রধান দিকগুলো:
- GPU: Adreno 750, যা গেমিং এবং গ্রাফিক্স-ইন্টেনসিভ টাস্কের জন্য চমৎকার।
- থার্মাল ম্যানেজমেন্ট: ফোনটি লম্বা সময় ব্যবহারের পরেও খুব বেশি গরম হয় না।
- র্যাম ম্যানেজমেন্ট: 12GB/16GB LPDDR5X র্যাম মাল্টিটাস্কিংয়ের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।
ক্যামেরা
Xiaomi 15 Ultra-র ক্যামেরা সেটআপ অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। এতে রয়েছে 200MP প্রাইমারি সেন্সর, যা Samsung-এর নতুন ISOCELL HP3 সেন্সর ব্যবহার করে। টেলিফটো লেন্সটি 10x অপটিক্যাল জুম সাপোর্ট করে এবং আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্সটি 120-ডিগ্রি ফিল্ড অফ ভিউ প্রদান করে।
আমি ক্যামেরা দিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলেছি এবং বলতে পারি, এটি ফটোগ্রাফির জন্য একেবারে পারফেক্ট।
ক্যামেরার প্রধান ফিচারগুলো:
- 8K ভিডিও রেকর্ডিং: প্রফেশনাল ভিডিওগ্রাফির জন্য আদর্শ।
- নাইট মোড: অন্ধকারেও ডিটেইল রিটেইন করে।
- AI ফটোগ্রাফি: প্রতিটি শটে বুদ্ধিমত্তার সাথে কালার ব্যালেন্স ও ডিটেইল ঠিক রাখে।
- ম্যাক্রো মোড: খুব কাছ থেকে ছবি তোলার সময় প্রতিটি ডিটেইল স্পষ্ট দেখা যায়।
সেলফি ক্যামেরার অভিজ্ঞতা
32MP সেলফি ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং ন্যাচারাল। এর AI বিউটিফিকেশন ফিচার খুব ভালো কাজ করে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ছবি তুললে।
ব্যাটারি
ফোনটির 5000mAh ব্যাটারি একদিনের বেশি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।
ব্যাটারির প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- ফাস্ট চার্জিং: 120W চার্জিং ব্যবস্থার কারণে মাত্র ২৫ মিনিটে ০ থেকে ১০০% চার্জ করা যায়।
- ওয়্যারলেস চার্জিং: 50W ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে, যা অধিকাংশ ফ্ল্যাগশিপ ফোনে পাওয়া যায় না।
- ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশন: MIUI 15-এর নতুন অপ্টিমাইজেশন ব্যাটারির পারফরম্যান্স আরও বাড়িয়ে তোলে।
ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায়, গেমিং এবং ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের পরেও দিনশেষে ২০-২৫% ব্যাটারি অবশিষ্ট থাকে।
মূল্য এবং ভ্যালু
সম্ভাব্য মূল্য হিসেবে Xiaomi 15 Ultra-এর প্রাথমিক দাম হবে প্রায় ১,২০,০০০ টাকা। এই দামের মধ্যে এটি একটি চমৎকার অপশন। এর ফিচার, ক্যামেরা, এবং পারফরম্যান্স এই দামে অন্য ব্র্যান্ডের ফোনগুলোর চেয়ে অনেক ভালো।
কেন এই ফোনটি কিনবেন?
- প্রিমিয়াম ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি।
- সেরা ক্যামেরা পারফরম্যান্স।
- অসাধারণ ব্যাটারি এবং চার্জিং সুবিধা।
- গেমিং এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য শক্তিশালী হার্ডওয়্যার।
বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন:
- Samsung Galaxy S23 Ultra: সেরা ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং এক্সট্রা ফিচার।
- iPhone 15 Pro Max: যারা iOS অভিজ্ঞতা চান তাদের জন্য।
- OnePlus 12 Pro: তুলনামূলক সস্তায় ভালো ফিচার।
আমার অভিজ্ঞতায় Xiaomi 15 Ultra একটি আদর্শ ফ্ল্যাগশিপ ফোন। যারা প্রিমিয়াম পারফরম্যান্স, দারুণ ক্যামেরা, এবং দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ চান, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো পছন্দ হবে। যদিও এর দাম কিছুটা বেশি, তবে এটি ফিচারের তুলনায় যথার্থ।

তবে, যেহেতু এটি একটি আপকামিং ফোন, তাই ফাইনাল স্পেসিফিকেশন এবং রিভিউ আসার পর আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। তাই আপনি যদি একটি ফ্ল্যাগশিপ ফোন কিনতে চান এবং বাজেট ঠিক রাখার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন, তাহলে Xiaomi 15 Ultra হতে পারে আপনার জন্য সেরা পছন্দ।
Also Read “Xiaomi Redmi Note 14 5G এর দাম কত“